“নিষ্ঠুর বন্ধুত্বের গল্প”
>> স্বপ্নগুলো কেমন যেন বৃষ্টির ফোঁটায় সিক্ত। টিপটিপ বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে সেই সকাল থেকে। আবছা সূর্যের আলোয় ঢাকা পড়ে আছে পুরো শহরটা।
আজ কলেজের নবীনবরণ। অরণ্য আজ অনেকটা বড়। আজ জীবনের নতুন আর একটি অধ্যায় শুরু হচ্ছে তার। স্বাভাবিক ভাবেই মনে একটা উত্তেজনা আর চঞ্চলতা কাজ করছে।কেমন যেন হবে সেই নতুন পরিবেশ আর মানুষগুলো -এসব চিন্তা অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়।
সে নিজেকে সামলে বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।বের হওয়ার আগে তার মা যাবতীয় সংস্কার করে দেন। পাছে খানিকটা চোখের জলও ফেলেন তার মৃত স্বামীর কথা ভেবে।
অরন্যের বাবা মারা যান যখন সে ক্লাস ফোর’এ এ পড়ে। তার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে। অনেক বড় হবে তার ছেলে। দেশ তথা সমস্ত সমাজ তাকে বাহবা দিবে তার ছেলের জন্য। তিনি চাইতেন ছেলেকে ডাক্তার বানিয়ে সমস্ত দরিদ্র লোকের সেবা করাবেন। কিন্তুু অল্প বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
কলেজের প্রথম দিন বেশ ভালভাবে কাটল। অনেক নতুন ছেলেমেয়েদের সাথে দেখা হল। কিন্তুু নতুন বলে কেউই কারও সাথে প্রথম দেখায় কথা বলল না। একটা ছেলে অনেকক্ষণ অরন্যের দিকে তাকিয়ে ছিল।
পরদিন ক্লাস শুরু হল ৯ টায়।অরন্য ক্লাসের প্রথম সারির ৪র্থ বেঞ্চটাতে বসল। পরের বেঞ্চে বসল সেই ছেলেটি। আধ ঘন্টার টিফিন টাইমে সেই ছেলেটি সরাসরি এসে অরন্যকে বলল “তোমার নাম কি? “অরন্য জবাবটা দিয়ে দিল। পরক্ষণেই উল্টো প্রশ্নটা সেও করল। পাল্টা জবাব এল “অপূর্ব”।এরপর অনেক কথা হল।
পরদিন ক্লাসে অপূর্ব অরন্যের সাথে এসে বসল। নতুন নতুন কলেজ বলে যত টিচার আসেন সবাই প্রথম পরিচয় পর্বটাই শুরু করেন। তাই পড়াশোনায় কে যে কেমন তা জানা হলনা।
এভাবে ১ টা বছর কেটে গেল। অরন্য, অপূর্ব দুজনেই ক্লাসের সেরা ছাত্রের মধ্যে এসে পড়ে।
পরের বছর এইচএসসি। তাই পড়াশোনার চাপটা বেড়ে গেছে। এখন তাদের দুইজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি।
পরীক্ষা হল। রেজাল্ট বের হল তিনমাসের আগেই। দুজনেই ভাল রেজাল্ট করল। এবার ভার্সিটির কোচিংয়ে গেল তারা।
এরমধ্যেই অপূর্ব অসুস্থ হয়ে পড়ল। ওর কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ল। বাবা, মা ভাই, বোন সমস্ত পরিবার এল হসপিটালে। অরন্য ও এল।ডাক্তার বলল -কোন পরিশ্রম করা যাবে না। একদমই বেডরেস্ট।
এ অবস্থায় অপূর্ব ভার্সিটি টেস্ট দিতে পারল না। অরন্য দিল। ও চান্স ও পেল।
এরপর ৭ টা মাস কাটল। অরন্য এখন অনেক ব্যস্ত।পুরো সপ্তাহেও সে অপূর্বের খোঁজ নিতে পারে না। এদিকে অপূর্বের সময়ও ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে ডাক্তার জানিয়ে দিল।কিন্তুু অরন্যের হাতে যে একটুও সময় নেই।
কিছুটা নিস্তেজ পরিবেশ। তারপর হতাশা।অপূর্বের চোখে অন্ধকার। হাসপাতালের মৃত রোগীদের স্বজনদের আর্তনাদ অপূর্বকে ভাবিয়ে তোলে তার স্বজনদের নিয়ে আর একজনকে নিয়ে।
সামনে ওষুধের টেবিলটা।উপরে প্রেসক্রিপশনের ফাইল। এর ভিতরে একটা কলম। অপূর্ব থরথর করে কাঁপে আর ওগুলো হাতে নেয়। নিরবে লিখতে শুরু করে। “নিষ্ঠুর বন্ধুত্বের গল্প ”
হঠাৎ একটা ঝড়ো হাওয়া এসে হাসপাতালের করিডোরের দরজাটা লাগিয়ে দিল।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।অপূর্বের মনে হল তার চোখের পানিতে বুঝি আজ অতল সমুদ্র সৃষ্টি হচ্ছে আর সে ধীরে ধীরে সেই সমুদ্রে প্রবেশ করছে।………………………
0 Comments