পিরিয়ড নিয়ে বাসর ঘরে বসে আছি।। খুব অস্বস্তি হচ্ছে

আমার। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।। অচেনা

একটা ছেলেকে কথাটা বলি কিভাবে? সে কিই না

ভাববে? অথবা আমার ইচ্ছার কতটুকুই বা মূল্যায়ন করবে??

যদি এমন অবস্থায়ও পুরুষত্ব ফলাতে চায়??

উফ্ কিছুই ভাবতে পারছিনা।। যতই সময় গড়িয়ে যাচ্ছে

ততই আমার টেনশনের মাত্রা বাড়ছে।। কি এক

অপ্রত্যাশিত ঝামেলায় না পড়লাম!!!!!


বিয়েটা আমার পারিবারিক ভাবেই হয়েছে।।

মধ্যবিত্ত এক ছোট পরিবারের সদস্য ছিলাম আমি।।

বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।।ছোটবেলা থেকেই খুব

পরিপাটি পরিবেশে বড় হয়েছি। এত আদরের মাঝেও

কেনো জানিনা অনার্স ১ম বর্ষে আসতেই বাবা মার

কাছে বোঝা হয়ে গেলাম। বসতে হলো বিয়ের

পিড়িতে।

ছোটবেলা থেকেই একটু শান্ত স্বভাবের মেয়ে আমি।

ঝামেলা তেমন একটা পছন্দ নয় আমার।। আর এই বয়স পর্যন্ত

প্রেমের অভিজ্ঞতা একেবারে নেই বললে একটু ভুল

হবে, কলেজে থাকতে প্রেমে জড়িয়েছিলাম একবার।।

তবে ছেলেটির ভালোবাসার মাঝে চাহিদার

ব্যাপক আগ্রহটা আমাকে একেবারেই নিরাশ

করেছিলো।। তারপর এই বিষয়টা নিয়ে আর ভাবার সময়

হয়ে ওঠেনি।।অবশ্য আমার বন্ধু বান্ধবীদের অনেক

ভালো খারাপ প্রেমলীলা খুব কাছ থেকে দেখেছি।।


যাইহোক যে ছেলেটির জন্য অধীর আগ্রহে এই

ফরমালিটি রক্ষার জন্য সেজেগুজে বসে আছি, তাকে

বিয়ের আগে আমার দেখার বা কথা বলার সৌভাগ্য

হয়ে ওঠেনি।। শুধু একবার মনের বিপরীতে ফটোটা

দেখেছিলাম, তবুও মায়ের জোড়াজুড়িতে।। খুব রাগ

হয়েছে বাবা মার ওপর।। কেননা এখুনি বিয়ে টা

কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না আমি।।

একপ্রকার জোরের মুখেই বাধ্য হয়েছি বিয়েটা করতে।।

এখন পর্যন্ত ছেলের বাড়ির পরিচিত বলতে ছেলের

মাকে বিয়ের আগে অনেকবার দেখতে হয়েছে,, সেই

সুবাদেই একটু পরিচিত।। আর আমার বরটার নামটা জানি

শুধু।।।

খুব সুন্দর না হলেও, আমার পছন্দসই নাম ওর।। মিঃ আবির।।

আর আমি হলাম মিরা……মি…..রা।।।

এই মিঃ আবির!! একপিছ…?? সালা কথা নাই বার্তা

নাই সেজেগুজে আমাকে বিয়ে করতে চলে এলো ।। খুব

রাগ ওর ওপর।। কিন্তু এই অবস্থায় আমার কোনো বুদ্ধিই

কাজ করছে না।। যাইহোক একটু শান্ত ভাবে বসে

থাকি, দেখি বীরপুরুষ মিঃ আবিরের কখন ঘরে আসার

সময় হয়।।



 

হঠাৎ ই দরজায় খট করে শব্দ হলো, আমার ভেতরটা চমকে

ওঠলো। মনে হয় মিঃ আবির সাহেব চলে এসেছেন। আমি

একটু নড়েচড়ে ঠিক হয়ে বসলাম, যেনো বলি হওয়ার জন্য

প্রস্তুত হচ্ছি।।

কিন্তু দরজায় শব্দের বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলো

অথচ কেউ ঘরে আসছে না।। ব্যাপার কি তাহলে শব্দটা

কিসের হলো?? তাহলে মিঃ আবির এখানে আসে

নি।।,,,,

উফফ অসহ্য লাগছে আমার।। খুব রাগও হচ্ছে সালা

হ্যাংলার ওপর।। ছবিতে দেখে যেটুকু বুঝেছি

হ্যাংলা, লম্বা, ফর্সা আর বড় চুলে আবৃত কপালের ঠিক

নিচ বরাবর লম্বা নাকের ওপর এক বিন্দু তিলক, যা পুরো

মুখটাকেই সুন্দরে ভরে তুলেছে। যার মায়াবি চোখে

অগাধ খাদ।।যা নিবিড় মায়াময়।। এমন দেখতে ছেলে

হলেও আমার কিচ্ছু যায় আসে না।। ব্যাটাকে আজ

জ্বালা বোঝাবো।। কিন্তু পরক্ষনে ই চুপসে গেলাম।।

ইস্স বাসর ঘর বলে কথা,, কি যে ভাবছি, না জানি

ভাবনাগুলো আমার ওপরই প্রতিফলিত হয়।।

আবারও হঠাৎ করেই ভয়টা বাড়তে লাগলো।।

এরই মধ্যে আমার ঘুমের ভাবটাও চলে এলো।। প্রায় ঘুমো

ঘুমোই হয়ে আসছিলাম।।

হঠাৎ করেই স্বজরেই দরজাটা খুলে গেলো,, আমি

আতঙ্কে জেগে ওঠি।। দেখি মিঃ আবির তাড়াহুড়া

করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। ওকে দেখে মনে হচ্ছে

যেনো যুদ্ধ জয় করে ফিরলো।। এদিকে ওকে দেখে

কাকভেজা মনে হচ্ছে আর হাতে একটা কিছু দেখা

যাচ্ছে।। তারমানে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে আর

মহাসাহেব কিছু আনতে গিয়ে কাকভেজা হয়ে

ভিজেছে।। ওদিকে ওর এমন অবস্থা আমাকে সত্যি সত্যি

আতঙ্কে ফেলে দেয়।।

আমি চুপচাপ হয়ে বসে পড়লাম।। ও আমার দিকে এগিয়ে

আসছিলো।। আমার হৃদকম্পন দ্বিগুন হতে লাগলো।।