আমার কল্পনায় তুমি................................... লেখায়ঃ Janu ................................... মেঘলা বাতাশ। বিকেলে নিশ্চুপ নিরবে হেটে চলেছি আনমনে শহরের কোনো এক গলিতে, চারদিকে মানুষের কোলাহল। ব্যস্ত শহরে মানুষের কোলাহল ছেড়ে হাটতে হাটতে চলে এসেছি শহর থেকে দূরে জন-মানবহীন স্থানে। চারদিকে কোনো মানুষ নেই, একদম নিরব একটা স্থান। বসে আছি একটা কোনো এক বটতলায়। হঠাৎ চোখের কোণে জলবিন্দু এসে জমাট হলো। আকাশটাও আমার চোখের সাথে তাল মিলিয়ে ঝরিয়ে দিলো বৃষ্টি কণা। দৌড়ে চলে আসলাম ছোট্ট একটি চায়ের দোকানে, অনেকটা ভিজে গেল আমার শরীর ঠান্ডাও লাগছে। ঠান্ডা কাটাতে চুমুক দিলাম চায়ের কাপে। বসে আছি যাত্রী ছাউনিতে বাসের অপেক্ষায়। পাশে কয়েকজন মানুষও আছে তারাও আমার মতো বাসের অপেক্ষায় বসে আছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ভার্চুয়ালে পা রাখলাম। নিউজফিড ঘুরে দেখতেছি তখনি ঝুম বৃষ্টি নামলো ‘‘কি করা আমি তো ছাতাও আনি নাই, আসার সময়ই তো দেখলাম কত সুন্দর রোদ এখন হঠাৎ বৃষ্টি, ধুর... কি করি? আজকে নির্ঘাত বৃষ্টিতে ভিজতে হবে, ধ্যাত! আকাশটাও বড্ড অভিমানী যখন তখন কেঁদে পেলে’’ বসে আছি মন খারাপ করে, ‘‘আজকে বাসেরও কি হয়েছে কে জানে আসতেও লেট করছে’’ ব্যাপারটা সত্যি অনেক বিরক্তকর লাগছিলো। কিন্তু বিরক্তকর মুহূর্তটা মুহূর্তের মধ্যে মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠলো। একি এটা মেয়ে নাকি অপ্সরী? আধা ভেজা অবস্থায় যাত্রী ছাউনিতে অপ্সরীর আগমন। ছাতাও হাতে তাও ভিজে গেছে চুলগুলোও হালকা ভিজে গেছে। চুলগুলো যেভাবে নাড়তেছে চুলের কয়েক ফোটা পানি মুখে এসে পড়তেই চমকে উঠলাম। -- সরি সরি, এই নিন মুখটা মুছে ফেলুন। -- (বোকার মতো টিস্যুটা হাতে নিলাম, আর তাকিয়ে রইলাম অবাক দৃষ্টিতে) আমি প্রতিদিনই বাসে করে অফিসে যাই কিন্তু কোনোদিন তো মেয়েটাকে দেখতে পাইনি। কোথা থেকে আসলো আল্লাহই জানে? আমার জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি কিন্তু এতো সুন্দর মেয়ে তো আমি আর একটাও দেখিনি। একটা মেয়ে কিভাবে এতো সুন্দর হতে পারে, চোখ ফেরাতেই পারছি না। বৃষ্টি থেমে গেল, তার কিছু সময় পরই বাসও আসলো। সবাই তাড়াহুড়া করে বাসে উঠে পড়লো। সেই সাথে অপ্সরীটাও, সবার শেষে আমিও উঠলাম, ‘‘একি বাস তো পুরা মানুষে মানুষে ভরে গেছে আমি কোথায় বসবো’’ পিছনের দিকে যাচ্ছি। ওহ আল্লাহ আমার তো দেখছি কপালটা সেইরকম ভালো, একটা সিট খালি আছে, তাও সেই মেয়েটার পাশের সিটটা, সিটের পাশে গিয়েই দাড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরই মেয়েটা বললো। -- আপনি কি মেয়েদের সাথে বসেন না? -- না মানে, জালানার পাশে বসতে ভালো লাগে না। -- ওওও, ভেবেছিলাম মেয়েটা আমার কথা শুনে জানালার পাশে গিয়ে বসবে, কিন্তু না বসলো না। :-( হঠাৎ ড্রাইভার সাহেবের ব্রেক, পড়ে যেতে লাগছিলাম কিন্তু পড়িনি কনট্রোলে ছিলাম তাই। ব্রেকটা যে ভাগ্য খুলে যাবে বুঝতে পারিনি। মেয়েটা জানালার পাশে গিয়েই বসলো। -- বসুন (মুচকি হেসে) -- থ্যাংক ইউ। -- হুম চুপ করে বসে পড়লাম, পুরো রাস্তা কোনো কথা বলিনি। আমি কিন্তু এমন চুপ করে থাকার ছেলে না কিন্তু কেন জানি মেয়েটার সাথে কোনো কথাই বলতে পারলাম না। সেদিন আর অফিস করতে পারিনি, কারণ মেয়েটার চেহারাটাই শুধু চোখের সামনে ভাসছিলো। সেই সাথে চুলের পানি ঝরানোর মোমেন্টটা। পরেরদিন একি সময় মেয়েটাকে আবার দেখতে পেলাম, মেয়েটা একবারে ঠিক সময় আসে যখন বাসও আসে। আমি তো বাস ছুটে যাওয়ার ভয়ে পনের মিনিট আগেই আসি। আজকে আর সবার শেষে বাসে উঠি না মেয়েটার আগেই আমি বাসে উঠেছি। -- ভাই ব্যাগের কি ভাড়া দিবেন? -- কেন? (আমি) -- না, এক সিটে আপনি অন্য সিটে আপনার ব্যাগ রাখছেন তো...! -- লোক আছে, তার জন্য। -- ওহ, -- জ্বি.. আমি জানালার পাশেই বসেছি আজকে, আর পাশের সিটে আমার ব্যাগটা রেখেছি। মেয়েটা আমার সিট বরাবর আসতেই আমি ব্যাগটা সরিয়ে ফেলি, মেয়েটা দেখেও পিছনের দিকে চলে গেল। মাথা নিচু করে ব্যাগ কোলের মাঝে নিয়ে বসে আছি। কিন্তু ততক্ষণে বুঝতে পারলাম পাশে কেউ বসেছে। তাকিয়ে দেখি মেয়েটা, আমি তো অবাক হয়ে গেলাম, ভাবছি মেয়েটা পিছনের দিকে যখন গেছে আমার সাথে তো বসবে না, কিন্তু এটা কি হলো? -- এই যে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? (মেয়েটা) -- ওহ সরি.. (আমি) -- সরি কেন? -- এমনি। কিছু না বলেই মুচকি হাসলো। মুচকি হাসিতে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে। মুচকি হাসিতে মুখে টোল পড়ে, আর মুখে টোল পড়া মেয়েগুলো এমনিতে অনেক কিউট হয়। কিন্তু মেয়েটা একটু বেশিই। তার উপর মায়াবী চেহারা সত্যি ক্রাশ খাওয়ার মতোই। যে কেউ দেখলে ক্রাশ খাবে, আমিও কিন্তু বাকি ছিলাম না কালকে থেকে ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। যেটা শুধু আমি জানি, আর এখন আপনারাও, বইলেন না কিন্তু? -- আচ্ছা... (আমি) -- জ্বি বলুন? (মেয়েটা) -- নাহ্, কিছু না। জানি না কেন মেয়েটার সাথে কথা বলতে এতো ভয় করে আমার। মেয়েটা তো দেখতে ভয় করার মতো কিছুই না তাও কেন এতো ভয় করে। এসব ভাবতে ভাবতে বলে দিলাম... -- আপনার নামটা...? (আমি) -- আমার নামটা.. কি? (মেয়েটা) -- না মানে নামটা জানতে চাচ্ছিলাম আর কি? -- ওওও, আমার নাম হিয়া। -- সু! সুন্দর নাম। -- থ্যাংকস। -- আমি আরিয়ান। -- ও.. -- কোথায় যাচ্ছেন? -- আমি... -- হুঁ.. -- ভার্সিটি .. -- ও, আমিও অফিসে যাচ্ছি। -- আমি ভার্সিটি যাচ্ছি। -- ও.. কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম, মেয়েটার কথা আমি উল্টা শুনেছি, বলছে ভার্সিটি আমি ভেবেছি অফিসে। মেয়েটার সামনে কেমন জানি মুখ, কান দুইটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মুখে তোতলাচ্ছি, আর কানে ভুল শুনতেছি। -- কিসে পড়েন আপনি? -- এবার অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে। -- দেখে মনে হয় না। -- কি মনে হয় না? -- না মানে, আপনাকে দেখে মনে হয় না, আপনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। -- তো আমাকে দেখে কি ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী মনে হয় আপনার? (মুখটা কেমন রাগান্বিত ভাবে বললো) -- না..তা হবে কেন? আমি তো শুধু আমার কাছে যেমনটা মনে হলো সেটাই বললাম। (আবার চোখটা বড় করে তাকাতেই বলে দিলাম) সরি....! আর কোনো কথা বলিনি, একটু পরই মেয়েটা নেমে গেল। আমিও অফিস চলে গেলাম। পরেরদিন আর ব্যাগ দিয়ে পাশের সিটটা ব্লক করিনি, হিয়াও আমার পাশে বসতে পারেনি। এভাবে দুইটা দিন চলে গেল, এর পরের দিনই হিয়া আমার পাশেই বসলো, আমি সেই জানালার পাশে। চুপচাপ বসে আছি, কোনো কথা বলতেছি না। আসলে বলার ইচ্ছে থাকলেও বলতে পারছি না কারণ হিয়া রেগে যায় তো। পরে কখন কি বলে ফেলে রাগের মাথায়। -- সরি..! -- (হা করে রইলাম) -- হা করে আছেন কেন? সরি বলেছি, আপনাকে প্রপোজ করিনি? -- কেন? (একটু লজ্জাই পেলাম) -- পুরশুদিন রেগে কথা বলার জন্য..! -- না ঠিক আছে। -- থ্যাংকস.. -- থ্যাংকস! কেন? -- সরি এক্সেপ্ট করার জন্য। -- ওও। তারপর থেকে আমি হিয়ার জন্য সিট ব্লক করতাম আর ও এসে বসতো। পরিচিতিটা বাড়তে বাড়তে এখন আর শুধু বাসে নয়, আমাদের দেখাটা এখন বাইরেও হয়। কোম্পানিতে আমার প্রোমোশন হলো, এখন সপ্তাহে তিনদিন অফিস যেতে হয়। আর তিনদিন বাসায় থাকতে হয়। বাসায় বসে থাকি বললে ভুল হবে। কোম্পানির কিছু কাজ বাসায় থেকেই করি। আর সেই তিনদিন বিকেলে তো হিয়ার সাথে ঘুরতে বের হওয়া হয়। হিয়াকে কোনোদিন ভালোবাসি কথাটা বলিনি, কিন্তু হিয়াকে খুব সহজে বুঝিয়েছি ওকে কতটা ভালোবাসি। -- আচ্ছা হিয়া..! (আমি) -- হুম বলো। -- তোমার কি কিছু মনে হয় না? -- কি কিছু মনে হয় না? -- এই যে প্রতিদিন আমরা একসাথে ঘুরতে আসি, দেখা করি, এসব কেন? -- না তো..! কেন আসি? প্রতিদিন দেখা করি, ঘুরে বেড়াই, কেন? -- সত্যি জানো না..! -- নাআআআ তো। -- ওওও.. -- জানি... (সময় নিয়ে বললো) -- কেন? -- হুদাই? হা হা হা। হিয়ার হাসি দেখে আমি রীতিমত মুগ্ধ, ওর হাসিটাই আমাকে ওর প্রতি আরও দূর্বল করে দেয়। একটা মেয়ের হাসি কতটা সুন্দর হয় হিয়াকে না দেখলে জানতে পারতাম না। -- হুদাই নাহ্? -- হুম হুদাই তো। -- তোমাকে একটা কথা বলি..?? -- হুম বলো? -- সারাটা জীবন আমার হাতে হাত রেখে আমার পথ চলার সঙ্গীনি হবে। -- ভালোবাসো! -- বুঝতে পারোনি এতোদিনেও? -- হুমমমমমম.... একটু একটু। -- কনফিউজড? -- কনফিউজড আবার কনফিউজডও না। -- এটা কেমন কথা? -- আচ্ছা চলো বাসায় চলে যাই। -- ওকে চলো। কোনো উত্তর দিলো না, কিন্তু ওর কোনো রিয়েক্ট না দেখে বুঝতে পারলাম হিয়াও আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড। পরেরদিন হিয়া ভার্সিটি গেল না, সেদিন দেখাও হয়নি। ফোনও অফ ছিলো তারপরের দিনই হিয়ার কলে আমার সকালের ঘুম ভাঙ্গলো। -- হ্যালো। (আমি) -- ঘুমাও? (হিয়া) -- হুম, তোমার কলেই তো ঘুম ভাঙ্গলো। -- তোমার সাথে একটু কথা ছিলো। -- বলো, -- ফোনে না, দেখা করতে পারবে? আজকে কি অফিস আছে? -- না অফিস নেই তাই তো ঘুমাচ্ছি। কখন দেখা করতে হবে। -- একটুপর ১০টার দিকে হলে হবে। -- আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসবো। কিন্তু কালকে তুমি ভার্সিটি যাওনি, কল দিয়েও পায়নি, ব্যাকও করলে না। -- তুমি আসো আসলে বলবো। -- ঠিক আছে, কেমন আছো তুমি? -- ভালো, রাখছি দেখা হলে কথা হবে। -- আচ্ছা। হিয়ার কথায় কেমন একটা মনে হচ্ছিল। কি বলতে এতো সকাল সকাল কল দিলো, এসব ভাবতে ভাবতে সাড়ে নয়টা বেজে গেল আমি এখনো বেডেই শুয়ে আছি, আমার হাতে আধঘন্টা সময় তার মধ্যে রেডি হয়ে হিয়ার সাথে দেখা করতে যেতে হবে। কোনোদিনও আমি হিয়াকে অপেক্ষায় রাখিনি আজকে মনে হচ্ছে হিয়াকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। ঠিক তাই হলো রাস্তায় ভালো জ্যামে পড়েছি। ‘‘ধুর... দরকারের সময় কোথা থেকে এতো জ্যাম লাগে কে জানে? মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে’’ যেতে যেতে ১৫মিনিট লেট.... -- সরি সরি,, রাস্তায় জ্যাম ছিলো তাই লেট হলো। (আমি) -- আমার বিয়ে...!! -- কি...? এক মুহূর্তে আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম, মনে হচ্ছিল আমি সব কিছু হারিয়ে একদম একা হয়ে গেছি। -- কথা তো আগে শুনো... আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছে বাবা, কালকে হুট করে কোথা থেকে একটা ছেলে আমাকে দেখতে আসছে বললো, বাবার মুখের উপর কোনো কথা বলতে পারিনি এক প্রকার বাধ্য হয়ে ছেলেটার সামনে গিয়েছি। লন্ডনে থাকে বিয়ের পর নাকি আমাকেও লন্ডন নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি ওর সাথে নয় তোমার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাই। -- চলো... -- কোথায়? -- চলো না। হিয়াকে সোজা বাসায় নিয়ে আসলাম। -- আম্মু (আমি) -- আসসালামু আলাইকুম (হিয়া) -- ওয়ালাইকুম আসসালাম (আম্মু) -- তুমি বউমা খুঁজছিলে না, এই মেয়েটাকে দেখো নাম হিয়া, ভার্সিটি পড়ে, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে, খুব ভালোবাসি হিয়াকে, বিয়ে করলে আমি হিয়াকেই করবে। আম্মুকে সব বললাম, আম্মুর হিয়াকে খুব পছন্দ হয়েছে। তারপর হিয়াকে তাদের বাসায় দিয়ে আসলাম এবং বললাম আমার কথা যেন তার পরিবারে জানায়। -- বাবা.. (হিয়া) -- কি মা... (বাবা) -- তোমার পছন্দ করা লন্ডনের ছেলেটাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না। -- কেন? তুই কি কাউকে পছন্দ করিস। -- করি বললেও ভুল হবে, করি না বললেও ভুল হবে। তোমাদের কথা ভেবে আমি ছেলেটাকে হ্যা না কিছু বলিনি। কিন্তু কালকে যখন ছেলেটা দেখে আমি আজকে ওকে বলেছি ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। -- ছেলেটা কি করে? -- একটা কোম্পানিতে চাকরী করে। ছেলেটা আমাকে প্রেমের নয় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। তুমি চাইলে ও আর ওর মা আসবে বিকালে। -- আচ্ছা, ওর মাকে আসতে বলো। -- বাবা..! -- আমাকে সুখি দেখতে চাইলে ছেলেটার সাথেই আমাকে বিয়ে দিও। হিয়ার বাবার আমাকে পছন্দ হলেও লন্ডনে থাকা ছেলেটার জন্য হিয়াকে বলেছিলো কারণ তার টাকা আছে হয়ত একটু বেশি সুখে থাকবে। কিন্তু হিয়া উত্তর দিয়েছিলো ‘‘বাবা শুধু টাকা থাকলেই সুখে থাকা যায় না, সুখে থাকতে হলে ভালোবাসার বেশি প্রয়োজন, আর আরিয়ান আমাকে খুব ভালোবাসে, ওর কাছেই আমি সুখে থাকবো’’ দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো। বাসর ঘরে লাল বেনারসি পড়ে বসে আছে আমার প্রথম দেখা সেই অপ্সরী, হিয়াকে আজকে কতটা সুন্দর লাগছে এটা কাউকে বলে বুঝানোর মতো না। অপ্সরীর উপরে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে হিয়াকে তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। দরজা বন্ধ করে হিয়ার সামনে গিয়ে বসলাম, আর গোমটা সরিয়ে হিয়াকে দেখতেছি। -- কি দেখছো? (হিয়া) -- তোমাকে! -- আমাকে এতো দেখার কি আছে শুনি, প্রতিদিনই তো দেখো? -- প্রতিদিন তো তুমি এতো সেঁজেগুজে আমার জন্য খাটের উপর বউ সেঁজে বসে থাকো না। -- চুপ! -- কেন? লজ্জায় দেখছি লাল মুখখানা আরও লাল হয়ে যাচ্ছে। -- চুপ শয়তান, বেশি বেশি। -- হুম, বেশি বেশি হলে তো বলবে আমার বল কম কম। -- চুপ করে ঘুমাও বেশি কথা বলবে না। -- ঘুমাবো! -- হুম, কেন জেগে থাকবে নাকি? নাকি জেগে জেগে আমাকে পাহারা দিবে। -- এই রাতে ঘুমাবো! -- কেন এ রাতে কি ঘুমানো যায় না নাকি হুঁ। এই তুমি লাইট কেন বন্ধ করেছো আমার ভয় লাগছে তো। -- আমি আছি তো। -- এ ভাই চা তো ঠান্ডা হয়ে গেল, খেলেন না যে? -- এই নেন। -- আরেকটা চা বানিয়ে দিবো ভাই? -- না থাক, বৃষ্টি থেমে গেছে। দোকানদারের ডাকে ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসলাম বাস্তবে। হিয়া! আমার প্রথম দেখা সেই অপ্সরী এখন আর আমার মাঝে নেই। বিয়ের দু’মাস না হতেই আমাকে ছেড়ে সে একাই পাড়ি জমালো না ফেরার দেশে। বিয়ের পর ২৮দিনের সময় হিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। ডক্টরের কাছে নেয়ার পর ডক্টর পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় হিয়া ‘ব্লাড ক্যান্সার’-এ আক্রান্ত। যেকোনো সময় যা কিছু ঘটে যেতে পারে। সৃষ্টিকর্তার নিয়ম সত্যি খুব অদ্ভুত, কারও সুখ বেশিদিন রাখেন না। তেমনি আমারও এমনটা হলো, ডক্টরের কাছ থেকে আসার পর হিয়া আমাকে বলেছিলো। -- তুমি আমার জন্য একদম মন খারাপ করো না। আমার থেকেও সুন্দর কাউকে বিয়ে করে নিও। আর ঠিক মতো খাবে, ঘুমাবে প্রতিদিন সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবে। আমাকে যেমনটা ভালোবাসো নতুন বউকেও তেমনি ভালোবাসবে। -- (হিয়ার কথাগুলো কোনো জবাব আমার কাছে ছিলো না, চোখ পানি ফেলানো ছাড়া) -- এই পাগল তুমি কাঁদছো কেন? আমি অাছি তো তোমার পাশে সব সময় প্রতিটা মুহূর্তে। ওর বলে যাওয়া কথা গুলো প্রতিটা সেকেন্ড আমার কানে বাজে। কেন সে আমাকে এতো একা করে দিলো। সবাই তো কত বছর বাঁচে শুধু ওকেই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে হলো।