"কয়েকটা দিন বেশ ভালোই কাটলো।ওর হাসিটা আমাকে এতটা কেন মুগ্ধ করে আমি জানিনা। বিকালে আকাশের অবস্থা ভালো না দেখে ভাবলাম ওর সাথে আড্ডা দেই।ওর রুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।দেখলাম আমার সাদা শার্টটা আইরন করছে। এই সময় যদি শাড়ি পরতো।আর শাড়ির আঁচল কোমরে পেঁচানো থাকতো তাহলে একদম আমার বউ বউ লাগতো।আমি একটু কাশি দিয়ে ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।


"পুষ্পিতা এই শার্টের বাটন তো ছেড়া। এইটা তুমি আইরন কেন করছো?


"চোখে ঠিকমতো দেখো না নাকি?


"হ্যা দেখি তো…


"চোখে ঠিকমতো দেখলে তো এটাও দেখতে শার্টের বাটন লাগানো।


"বাহ বেশ তো।কিন্তু সুঁচসুতা কই পেলে?এই বাসায় তো এসব কিছুই নেই।


"ভাবীর কাছ থেকে এনেছি।


"ভালোই…


আমি বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম দেখি ভাবি সিঁড়ি দিয়ে উপরে আসছে..


"কি খবর ছোট সাহেব?


"ভালো ভাবি।


"শুধু ভালো?


"হুম..


"মেয়েটা কিন্তু সংসারী..


"কোন মেয়ে বলো তো??পুস্প?


"হ্যা।ভালোই মানাবে তোমাদের।সময় থাকতে বলে দাও নয়তো অন্য কেউ নিয়ে চলে যাবে।তখন আফসোস করবে।


"আরে ধুরর ভাবী কি যে বলো না..


" কি যে না।যা বললাম ঠিকই বললাম।কোথায় যাচ্ছো তুমি?


"বড় মাঠে।


"আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরো..


অর্ধেক রাস্তা যেতে না যেতেই বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গেলাম।ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরতে লাগলাম।ফেরার সময় ভাবীর বলা কথাটা নিয়ে বেশ ভাবলাম।ভাবতেই মেজাজটা সকালের মত আবারও খারাপ হয়ে গেলো।


সকালের দিকে ঘুম থেকে উঠে ব্যাল্কনিতে দাঁড়িয়েছিলাম।নিচে তাকিয়ে দেখি পুষ্পিতা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।বিষয়টা আমি কেন জানিনা মানতে পারছিলাম না।এই জন্য মেজাজ খানিকটা খারাপ ছিলো সকালে।


বাসায় ফিরে দেখি পুষ্পিতা টিভি দেখছে।চেঞ্জ করে মাথা মুছতে মুছতে টিভির রুমে গেলাম।আমাকে দেখে পুষ্পিতা উঠে দাঁড়ালো।আমার সামনে এসে বললো-


"এইভাবে কেউ মাথা মুছে??


"কেন?


আমার হাত থেকে টাওয়েলটা নিয়ে আমার মাথা মুছে দিতে লাগলো।আবারো আমার বুকের বাম পাশটাতে মোচড় দিয়ে উঠলো।অন্যরকম একটা অনুভূতি অনুভব করতে লাগলাম যতটা সময় পুষ্পিতা আমার মাথা মুছে দিচ্ছিলো।


"প্রণব আমার জবটা হয়ে গেছে।


কথাটা শোনার পরে মুখে গুড নিউজ বললেও এটা ভেবে মনটা একটু খারাপ হলো।তাহলে কি ও চলে যাবে?


"তোমার প্রব্লেম না থাকলে আর একমাস থাকতে হবে।প্রথম মাসে স্যালারি পেলেই বাসা নিবো।


"আচ্ছা..


পুষ্পিতা যখন চলে যাচ্ছিলো মাথা মুছে দিয়ে আমি ওর হাতটা টেনে ধরলাম


ও দাঁড়িয়ে একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে।


"তোমাকে কিছু বলার ছিলো।কথা গুলা আমি আজকে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ভাবলাম।


"হ্যা বলো।


"আসলে..


"কি


" ভাবী বলছিলো তুমি যদি আমার বউ হইলে আমাদের বেশ মানাইতো।


"ও এই কথা?ভাবী আমাকেও বলছিলো সেইদিন।


"আসলে আ.. আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে..


"হ্যা বলো…


"আসলে আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।


"বুঝলাম তো যে কিছু বলতে চাও।তা কি বলতে চাও না বললে বুঝি কিভাবে?


"আ… আমি চাই যে..


"কি.. কি চাও তুমি??


"আ..আমি চা..চাই যে তো… তোমাকে..


"আ.. আমাকে কি??তোতলাচ্ছো কেন?


"আসলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই..


"কেন??


"তোমাকে খুব ভালো লাগে।তোমাকে হাসতে দেখলে অন্যরকম একটা অনুভূতি মনের মধ্যে তোলপাড় শুরু করে দেই। এই অনুভূতির নাম আমি জানিনা।কিন্তু তখন মনে হয় তুমি শুধু আমার।তোমাকে আমি আমার করে চাই।তুমি জানো অন্য কাউকে তোমার সাথে দেখলে আমার সহ্য হয়না।


"হিহিহি ব্যাস এতটুকুই?


"হাসছো কেন তুমি?


এতে হাসার কি আছে হু...


"আচ্ছা আর হাসবো না।তুমি তো দেখি ঠিক মতো প্রপোজ ও করতে পারো না।


"মনে যা আসছে তাই তো বললাম..


"হুম বুঝলাম।হাতটা ছাড়ো।


আমি হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললাম-


"স্যরি আসলে.. তুমি এখন বলো।আমার জন্য কিছু ফিল করো না??


"হুম করি তো।


"কি ফিল করো?


"এটাই যে তোমার শার্টের বাটন লাগানোর রাইটটা শুধু আমার।তোমার আমার দিকে তাকানো দেখলেই আমি বুঝতে পারি যে তুমি আমার জন্য কি অনুভব করো।


কেউ যখন কাউকে মন থেকে ভালোবাসে তখন তার চোখের ভাষা পড়ারও ক্ষমতা রাখে।বুঝলে বোকারাম?


"তাই না?


"হুম..


"তাহলে ভাইয়া ভাবি কে কাজী ডেকে বিয়েটা দিয়ে দিতে বলি??


পুষ্পিতা লজ্জা পেলো।এই প্রথম আমি ওকে লজ্জা পেতে দেখলাম।ওর লজ্জামিশ্রিত মুখটা দেখে বুকের মধ্যে আবারও সেই অনুভূতি নাড়া দিয়ে উঠলো..