ফেসবুকের নেশায় খারাপ হয়ে যাওয়া ছাত্রটির গল্প" . বিশেষ_করে_SSC_HSC_পরীক্ষার্থীদের_ পড়ার_অনুরোধ_রইলো ! তবে সবার জন্যে শিক্ষনীয় হবে ৷ . মাথায় চুকচুকে করে তেল দেয়া ও বাম পার্শ্বে চুল ফাঁক করে সিথি করা সাদাসিদা ভদ্র ছেলেটার নাম আব্দুল করিম। যাকে কলেজে কম বেশি সবাই চিনে।কলেজের মুখ বরাবরি এই করিমের জন্যেই উজ্জ্বল।যেমনি সে একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তেমনি তার নম্র ব্যবহার। তবে এই করিমের পোঁষাক আশাক দেখে অনেক সুন্দরি মেয়েদের কাছে সে ক্ষ্যাত নামে পরিচিত। . এই করিম কে আবার অনেকই চিনেই না।কারণ সে ঠিক সময়ে কলেজে আসবে আর টিফিন টাইমে যাষ্ট টিফিনটা নিয়েই পড়তে বসবে।তাই অনেকের কাছে সে আবার অপরিচিতও। তাই তার তেমন বন্ধু বা মেয়ে বন্ধুও নেই। . আব্দুল করিম এইবার এইচএসসি পরিক্ষা দিবে।মায়ের অনেক বড় আশা এইচএসসি পরিক্ষায় ভালো একটা স্কোলার্শিপ নিয়ে মেডিকেলে পড়বে। আর গরীব ও অসহায় মানুষদের ফ্রি চিকিৎসা দিবে। তাই মায়ের স্বপ্নের কথা ভেবে পড়া শুনাতে খুব মন দিয়ে পড়তে থাকে। . করিমের পরিক্ষার বাকি আর ৫ মাস।খুব ভালো ভাবেই সব কিছুই চলছিলো।এমন সময় এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারে ফেসবুকে নাকি অনেক ভালো ভালো কলেজের টিচারদের সাজেসন্স পাওয়া যায়। তাই করিম তার আম্মুকে একথা বুঝিয়ে বললে তিনি ধার করে কিছু টাকা সংগ্রহ করে তার ছেলেকে একটা এন্ড্রয়েড ফোন কিনে দেয়। . তার পরেরদিন সকালে কলেজে এসে তার এক পরিচিত বন্ধুর কাছে থেকে একটি ফেসবুকের আইডি খুলে নেয়।তার বন্ধু কয়েকটা সাজেসন্স গ্রুপে জয়েন দিয়ে দেয় এবং সাথে কয়েকটা রেডিও পেজে ও লাইক দিয়ে দেয় যাতে গল্প টল্প পড়তে পারে এবং সকল বিষয়ে একটু একটু ধারনা দিয়ে দেয় কিভাবে কি করতে হবে। . সব কিছু ভালো ভাবেই চলতে ছিলো।সাজেসন্স গ্রুপ গুলা থেকে খুব ভালো ভালো কিছু সংগ্রহ করে অধ্যায়ন করতে থাকে। একদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও করিম একটি বিষয়ে সাজেসন্স লিখে গ্রুপে পোষ্ট দেয়! সেই পোষ্টায় কম সময়ে অনেক লাইক কমেন্ট আসতে থাকে।মনে মনে করিম অনেক খুশি। . সেই দিনের মত করিম ফেসবুক থেকে বের হয়ে পড়তে বসে।পরেরদিন সকালে আর ফেসবুকে না ঢুকে কলেজ থেকে এসে একদম বিকালে ঢুকে। ঢুকে দেখে একটা মেয়ে অনেক গুলা মেসেজ করেছে! তার মধ্যে কয়েকটা মেসেজ এমন ছিলো- ভাইয়া আপনি তো অনেক ব্রিলিয়ান্ট,আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! এসব মেসেজ সিন করতেই হঠাৎ মেয়েটি আবার মেসেজ করলো- . _হাই, ভাইয়া? _হ্যালো, জ্বি বলেন? _ভাইয়া আপনি যে সাজেসন্স গুলা দিয়েছিলেন তা আমার টেষ্ট পরিক্ষায় ৮৫% কমন পরেছিলো। আপনাকে অন্নেক অন্নেক ধন্যবাদ। _হুম ওয়েলকাম।তবে এতোটা কারো উপকারে আসবে তা ভাবিনি! _ভাইয়া আমি কি আপনার ফ্রেন্ড হতে পারি? _আপনি আমার ফ্রেন্ড হবেন?হা হা হা _হাসলেন যে? ফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্যতা বুঝি আমার নেই ভাইয়া? _হাসলাম এই জন্যে যে আপনিই প্রথম আমার মেয়ে বন্ধু হতে চাইতেছেন। এর আগে কোনো মেয়ে হতে চাইনি তো তাই। _তাই নাকি? এতো ব্রিলিয়ান্ট একটা স্টুডেন্টের আবার মেয়ে বন্ধু নেই! অনেক মজার ব্যপার তো! _হ্যা তাই হয়তো। _কি তাই হয়তো? _ঐ যে বল্লেন মজার ব্যপার তো! _ও আচ্ছা! তো আমি আপনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিচ্ছি এক্সেপ্ট করেন কেমন? _আচ্ছা ঠিক আছে! আজ তাহলে আসি।বাই টা টা . মেয়েটার সাথে কথা বলতে বলতে দেখে ১১ টা বেজে গেছে! টাইমটা একদমি খেয়াল করেনি! সেদিন একটু পড়েই ঘুমিয়ে পরে। এবং মেয়েটাকে নিয়ে নানা কথা ভাবতে থাকে।আর মনে মনে করিম খুব খুশি।কারণ তার একটি মেয়ে বন্ধু হয়েছে। . করিমের প্রতিদিন মেয়েটার সাথে এখন তার মেয়েটার সাথে নিয়মিত কথা হয়। সকল সময়ে মেয়েটির সাথে চ্যাটিং এ সে ব্যস্ত সময় কাটাইতেছে। কোচিং এ গিয়েও ফাষ্টের বসা ছাত্রটা এখন শেষের বেঞ্চের দিকে বসে মেয়েটার সাথে চ্যাট করে।ব্যাপারটা অনেক টিচারের চোখেও পড়েছে কিন্তু ভালো ছাত্র বলে কেউ কিছুই বলেনি! . করিমের এমন পরিবর্তন দেখে জিসান ডেকে বললো- . _দেখ করিম, তুই অনেক ভালো ছাত্র।তোর কাছে ভালো কিছু পাওয়ার আশায় অনেকেই পথ চেয়ে আছে।আর তোর কাছে আমরা বন্ধু গুলাও চাই তোর মায়ের স্বপ্নটা পূরণ কর। _তো আমি আবার কি করলাম?! লেখা পড়া তো করতেছি।যে লেখা পড়া করতেছি তাতেই সেই রকম রেজাল্ট হবে।আর তাছাড়াও আমার সব জিনিসি পড়াই আছে _যতই পড়া থাক তবুও! আর তুই যে অপরিচিত একটি মেয়ের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করতেছিস তার জন্যে আফসোস করতে হবে!! _যা তো জ্ঞান দিতে হবেনা।তুই যা নিজের লেখা পড়া ঠিকমত! . জিসান সেদিন মন খারাপ করে করিমের কাছে থেকে আসলেও সে জানে এর শেষ পরিণিতি কি! তার অনেক খারাপ লাগতেছিলো করিমের জন্যে। এমন একটা অভাবি সংসারে বেড়ে ওঠা ফুলটা অকালেই ঝরে যাবে! . এই দিকে করিম রাত দিন ব্যস্ত সময় কাটাইতেছে ফেসবুকের সেই মেয়েটির সাথে। ফাইনাল পরিক্ষার আর বাকি ২ দিন।সবাই পড়া শুনায় ব্যস্ত আর করিম ব্যস্ত চ্যাটিং নিয়ে।এমন অবস্থা করিমের দেখে তার মূর্খ্য মাও কিছু বললে নানা কথা বলে রাগারাগি করে। তাই করিমের মা ও কিছু বলেনা খালি কান্না করে! . করিমের পরিক্ষা শুরু হয়েছে।এখনো তার পড়া শুনায় ঠিকমত মন নেই। কোনো রকমে বইটা পড়েই সেই মেয়ের সাথে চ্যাটিং করে ঘুমিয়ে যায়! এই অবস্থায় সকালে উঠেই পরিক্ষা দিতে যায় করিম। সবাই পরিক্ষার ভালো ভাবেই দিচ্ছিলো কিন্তু করিমের কেন জানি মন মত প্রশ্ন গুলো আসেনি। জিসান কে বলে প্রশ্নটা এতো কঠিন করার কি দরকার এক্সামিনারের?! জিসান খালি করিমের মুখের দিকে তাকিয়ে হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। কারণ প্রশ্ন গুলো মটেও কঠিন হয়নি। . করিমের পরিক্ষা শেষ অনেক কয়দিন আগেই। আজ রেজাল্ট দিবে তার।তার মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে কিছু টাকা জোগাড় করেছে। তার ছেলে করিমের রেজাল্ট হলে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবে।আর টিচারেরাও অনেক আশা নিয়ে আছে করিমের উত্তম রেজাল্টের। সময় এখন ২ টা।রেজাল্ট পাবলিসড হয়েছে। করিম খুব তারাতারি রেডি হয়ে কলেজে গেলো। কিন্তু কলেজে গিয়ে দেখলো করিমের রেজাল্ট তো পাশের লিষ্টে নেই! চারদিকে কেমন যেনো অন্ধকার নেমে আসলো করিমের ।সে যেনো চারপাশে কিছুই দেখতে পাইতেছেনা।ব্যপারটা খেয়াল করে দেখলো জিসান।সে নিজে গিয়ে দেখলো রেজাল্টশিট। আবার একরাশ হতাশা তার চোখে পরলো! হ্যা করিম সত্যিই ফেল করেছে।তাও আবার তিন সাবজেক্টে। . করিম অনেক রাতে বাসায় ফিরলো।তার মা এখনো পথ চেয়ে আছে ভালো একটা রেজাল্টের আশায়। বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই- . _বাপ অনেক ভালো রেজাল্ট হয়েছে নাহ? ঘড়ে মিষ্টি এনে রাখছি যা তার বন্ধুদের খাইয়ে দিয়ে আয়? _না, মা! আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি।আমি ফেল করেছি! (কান্না জড়িত কন্ঠ) _না.... . কথাটি বলেই করিমের মা অজ্ঞান হয়ে যায়। অনেকখন পরে করিমের মায়ের জ্ঞান ফিরেছে।এখন তিনি ঘুমাইতেছে।এই ফাঁকে ফেসবুকের সেই মেয়েটিকে মেসেজ করলো করিম- . _কি করো? _এই তো আমার বফ এর সাথে কথা বলতাছি! তোমার রেজাল্টের খবর কি? _আমি ফেল করেছি!আর তোমার বফ আছে আগে তো বলোনি? _আমি জানতাম তুমি ফেল করেছো!আর বফ আজকেই বানিয়েছি একটা ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রকে কে! _তুমি আমার কাছে এই বলে একবারো খবর নিবেনা? _প্রয়োজন ছিলোনা।ভালো থেকো।আর ফেল করা একটা ছাত্রের সাথে আমার কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা! . তারপর আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মেয়েটি ব্লক মেরে দেয়ে করিম কে। সব কিছুই যেনো আজ শেষ করিমের।তার আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা! . # অনুরোধ : তাই পরিক্ষার্থীদের কাছে আমার অনুরোধ ফেবুতে অযাথা কারো সাথে চ্যাটিং বা সময় নষ্ট না করে পড়া শুনায় মন দিন। আর সবার স্বপ্ন কে পূরণ করুন। তবেই লেখাটা স্বার্থক। -