”মজার গল্প” চা খোর


>> সক্কাল সক্কাল চোখ কচলাতে কচলাতে টেবিলের সামনে এসে দেখি পোলাও, মুরগি রান্না করা হয়েছে। নাহ এতে চলবে না চা চাই। মা ওমা মা, করে করে মায়ের কান অর্ধেক খেয়ে ফেলছি।


 এদিকে উনার ওয়াজ শুরু বাকিদের ঘরে পোলাও, মুরগি হলে তাঁদের আর কিচ্ছু লাগে না আমার ঘরের এই এক আলামত। বেশি চা খাওয়া স্বাস্থ্যর জন্যে ক্ষতিকর তুই বরং চা খাওয়া বাদ দে। ধুর ছাই, চা দাও নয়তো খালি পেটেই কলেজ গেলাম।


 কলেজে যেতে লাগবে ২০ মিনিট কিন্তুু সময় আছে আর ১০ মিনিট কিছুতেই চা রেখে চলে যাওয়া যাবে না। অমঙ্গল হবে। এদিকে মায়ের ওয়াজ আবার শুরু লেখাপড়া করতে হবে না তুই শুধু সময় আর চা খা!


 ক্লাসের দরজার সামনে যেতেই স্যার বলছে প্রত্যেকটা দিন একটা মানুষ কিভাবে এতো লেইট করে ক্লাসে আসে আজকে তোমায় বলতেই হবে। কাচুমাচু করে বললাম, ইয়ে মানে স্যার জ্যাম ছিল।


 _প্রত্যেকদিন?

 _ জ্বি স্যার!

 _১০ মিনিট তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে।নিজের জায়গায় যাও।


 ক্লাস ভর্তি অসুস্ত পোলাপাইন হাসাহাসি করছে। ধুর, কার কি যায় আসে চা তো আর রেখে আসতে হয় নি। ইশ, এই ১০ মিনিটে যদি এক কাপ চা হতো তাহলে দাঁড়িয়ে থাকাটা বেশ জমতো।


 কোন রকমে ক্লাস করার পরেই দৌড়ে ক্যান্টিনে গেলাম, মামা কড়া লিকারের এক কাপ চা দেন তো। চা খাচ্ছি আর ভাবছি দুনিয়াতে চায়ের মতো একটা খাবার থাকতে মানুষ টিফিন টাইমে চানাচুর, চকলেট হেনতেন খায় কি করে।


 ঘন্টা পড়তেই ক্লাসে গেলাম। হাসাহাসির জন্য স্যার এক মেয়েকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে তাঁর দিকে ডেবডেব করে চেয়ে থেকে বলছি, ইশ এখন যদি তুই এই অবস্থায় এককাপ চা খেতে পারতি তাহলে তোর এই কষ্ট তুচ্ছ মনে হতো।


                 খুব একটা কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা কিছুই বলছে না। _সত্যি আমি নিজে তোকে চা বানিয়ে দিতাম।


                 _ চুপ করবি তুই? চা তুই না তোকে খেয়ে ফেলবে একদিন।


                 বাড়ি পৌঁছে জানতে পারি কাল আমায় বর পক্ষ দেখতে আসবে।আমি তো মহা খুশি। বান্ধবীদের কল দিয়ে বলছি কাল আমি কলেজে আসবো না, জায়গা রাখিস না। কলেজ যাবো না কারণ কাল আমাদের বাসায় কাল অনেক চা বানানো হবে।আচ্ছা রাখি!


                 রাতে এককাপ চা খেয়ে প্রায় নির্ঘুম হয়ে ভাবছি কখন বরযাত্রী আসবে!কখন আবার চা খাবো! এদিকে আম্মু ঘরের চা পাতা আর চিনি গায়েব করে দিয়েছে।বরযাত্রীই আমার চা খাওয়ার একমাত্র উপায়।


                 ভোরে ঘুম থেকে উঠেই মা কে জিজ্ঞেস করছি, তাঁরা কখন আসবে মা?


                 _কিসব বলছিস লোকে কি ভাববে। একটু লজ্জা পেতে হয়।


                 _ বিড়বিড় করে বলছি, কিরে বাবা,চা খেতেও লজ্জা পেতে হয় আগে জানতাম না তো!


                 এদিকে আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে তাঁদের সামনে যেতে বলা হচ্ছে। মা'কে ডেকে বললাম,চায়ের ট্রে টা কোথায়? দেখতে আসলে তো মেয়েরাই ট্রে হাতে নিয়ে তারপর দেখা করতে যায়।


                 মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,তাঁর কোনো দরকার নেই মা।এতো মানুষ থাকতে তুমি কষ্ট করবা তা কি হয়।


                 চোখে পানি এসে গেছে কষ্টে। যাবার আগে কি তাহলে চা দর্শনটুকুও হবে না!


                 তাঁদের সামনে গিয়ে চুপ করে বসে আছি।প্রতি প্রশ্নের জবাবে জ্বি,হা, আচ্ছা, না এইসব বলছি কিন্তু মন পড়ে আছে চায়ের কাপে। কখন আসবে সে।


                 যাক চা এসে গেছে আমি নড়েচড়ে বসলাম।হঠাৎ করেই মনে বেজে উঠলো হায় মাঝে হলো ছাড়াছাড়ি গেলেম কে কোথায়।আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয়!


                 ঘোর কাটতেই তাঁদের কথার মাঝে বলে ফেললাম, চা খাবেন? খেলে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন। চা ঠান্ডা হয়ে গেলে খেতে ভালো লাগে না।


                 ভেবেছিলাম বলবে না মা তুমি খেলে খাও!


                 কিন্তুু না তাঁরা কথাই বলছে। সৌজন্যতা দেখিয়েও বলতে পারতো খাবো,তুমি এককাপ নাও। কি বিচ্ছিরি ব্যাপার , কিসের এতো কথা বিয়ে হলে হবে না হলে নাই এদিকে চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।


                 অবশেষে এককাপ চা খেয়ে সবে শান্তি হলাম।পাঠিয়ে দিলো অন্য রুমে একান্তভাবে কথা বলতে।সামনে বসে থাকা ছেলেটা মাগুর মাছের মতো দেখতে ভালো করে খেয়াল ই করলাম না এতোক্ষণ। চা খেয়ে এখন চোখেও ভালো দেখছি।


                 আমাকে কিছু বলবে বলবে কাচুমাচু করছে।


                 _ আপনার নাম?


                 কথা উড়িয়ে দিয়ে জিঙ্গেস করলাম,


                 _ চা পছন্দ করেন?


                 _ আই ডোন্ট।


                 _ কি বিচ্ছিরি কথাবার্তা। চায়ের ব্যাপারে আই ডোন্ট শুনতে কেমন যেন গালির থেকেও বাজে শুনাচ্ছে। নাহ, এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না। আমার স্বপ্নের চাখোর ইনি নন। বর পছন্দ হয়েছে সবার কিন্তুু আমি মুখ ভার করে বসে আছি সামনে বসে আছেন মাগুর মাছের মতো চোয়াল বিশিষ্ট সেই পুরুষ।


 এখনি কিছু একটা করতে হবে চা অপছন্দ করা এই লোকের সঙ্গে সংসার করা ইম্পসিবল।


                 কেকা আন্টির কিছু রেসিপি আমার মন ছুয়ে যায়। দুধ আর আনারসের মিক্সড ভালোবাসার শরবত কিন্তুু হেব্বি একটা ব্যাপার। তাই উনার রেসিপিই পারে আমার বিয়ে ভাঙ্গতে।


তাছাড়া আমার প্রয়োজন চায়ের কোনো রেসিপি। নাহ! শেষমেশ এই খাবারই আমাকে খেতে হবে বিড়বিড় করে এক দৌড়ে অন্য রুম থেকে একটা কলা নিয়ে এলাম।সবার মাঝে গিয়ে সোফায় বসে এককাপ চায়ে কলা চুবিয়ে খাচ্ছি আর বলছি, আহ! কি ট্যাশ।


                 সবাই মিষ্টি খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে ডেবডেব করে চেয়ে আছে আর আমি খুব মনোযোগ দিয়ে চায়ে কলা চুবাচ্ছি, খাচ্ছি আর বলছি আহ! খুব ট্যাশ।


                 দুই পক্ষে মনে হয় হাতাহাতি হচ্ছে।বরযাত্রীরা চেঁচিয়ে বলছে, মনকরা করেন? পাগল ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন, যত্তসব!


                 কয়েক কাপ চা রেখে গেছে আমার খুশি আর ধরে না।


                 আজব তো নিজেদের ছেলে একটা পাগল। চা খায় না মানে কি। যাগ্গে কয়েক কাপ চা রেখে গেছে আমার খুশি আর ধরে না। মা এদিকে চেঁচাচ্ছে, দেখলি আমি বলেছিলাম এই চা একদিন তোকে গিলে খাবে,অমন ভালো পাত্র মানুষ হাত ছাড়া করে কখনো?


 এইসব বলতে বলতেই রাগে আমাকে এক ঘরে আটকে রেখেছে।জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি। মানুষের দিলে কি একটুও দয়া মায়া নেই চোখের সামনে দিয়ে চায়ের ট্রে টা কিভাবে নিয়ে চলে যাচ্ছে। চোখে ঝাপসা দেখছি আর ভাবছি ইশ, এই মুহুর্তে যদি এককাপ চা হতো।


                 আপাতত আমার কলেজ যাওয়া বন্ধ।আমি বাড়িতে আক্রমনাত্মক আচরণ করছি। সবার ধারণা কলেজ গেলে আমি লুকিয়ে চা খেয়ে ফেলবো তাছাড়া পাড়ার গলির চায়ের দোকান তো আছেই। চোখের নিচ কালো হয়ে আসছে, ঘরে বসে শুধু ভাত খাচ্ছি এদিকে চায়ের শোকে রাতে ঘুম হচ্ছে না।


 বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা একে একে আমায় দেখতে আসছেন আর আমি অপরাধীর মতো জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছি।


                 হঠাৎ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠি মা ওমা মা, মেহমানদের রেখে যাওয়া চা টুকু অন্তত দাও। সমবয়সী একজন বোঝাতে এসেছে, তোর আচরণ দিন দিন অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে তোকে এলাকার বাইরে রাখাই ভালো হবে।জিদ করে জানালার ওপাশ থেকে দিলাম তাঁর মাথায় এক মগ পানি ঠেলে। বাবা এসে বলছে, আজ রাতেই তোর ব্যবস্থা নিচ্ছি দাঁড়া!


                 _জ্বি হ্যালো, এটা কি আসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র? আমরা খুবই বিপদে আছি। আমাদের একমাত্র মেয়ে আসক্তির পাশাপাশি আক্রমনাত্মক আচরণ করছে। আপনারা দ্রুত একটা ব্যবস্থা নিন।


                 _ জ্বি, উনার নামটা বলুন।


                 _ তৃণা।


                 _ উনি কিসের প্রতি আসক্ত? মদ, গাঁজা নাকি সিগারেট! কিংবা উনি কি বিড়িখোর?


                 _ না স্যার। আমি ঠিকানা পাঠাচ্ছি আপনারা তাড়াতাড়ি এসে তাঁকে নিয়ে যান।


                 _ আচ্ছা আমরা আসবো আপনি সঙ্কোচ না রেখে বিস্তারিত বলুন আপনার মেয়ে কি তাহলে গাঁজাখোর?


                 _ না স্যার ও আসলে চাখোর।