পাগলি বৌ বিয়ে করেছি,
মাস পাঁচেক হবে।
★★→ জামাই আমার দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ কিন্তু তার একটা খারাপ অভ্যাস আছে।
স্কুল,কলেজ, অফিসের সহকর্মী এবং পাড়া-প্রতিবেশি কোন মেয়ে বাদ নেই যারা ওকে ফোন বা মেসেজ করে না,
বউ হিসেবে এটা আমি একদম পছন্দ করি না কারণ নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চাই না, এমনি এক সন্ধ্যায় দুজন বসে গল্প করছি, মুহূর্তটা খুব সুন্দর ছিলো,
হঠাৎ ওর ফোনে কল আসে, ও কল রিসিভ করে আড্ডা জুড়ে দেয়, প্রায় দুই ঘন্টা ফোনে কথা বলে বারান্দা থেকে রুমে এসে আমায় বলে- - সরি! সরি!
একটু লেট হয়ে গেলো, আসলে কলেজের এক বান্ধবী ফোন করেছে, অনেক দিন পর কথা তাই একটু লেট হয়ে গেলো.... রাগে আমার মাথা কাজ করছিলো না,
যতই বান্ধবী হোক তাই বলে বউ রেখে বান্ধবীর সাথে দুই ঘন্টা কথা বলবে!! রাগে তার সঙ্গে কথা না বলে না খেয়ে সেদিন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
কিছুদিন পর একদিন সকালে ও অফিসে যাচ্ছিলো, দরজা খুলে বের হতেই পাশের বাসার এক মেয়ের সাথে দেখা,
দুজন গল্প করতে করতে নিচে নেমে একই রিকশায় করে চলে গেলো, আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম, মনে মনে ভাবলাম স্বামী আমার
,তাহলে ওই মেয়ে কেন ওর সাথে রিকশায় যাবে? একই সঙ্গে রিকশায় যাওয়ার সময় নিশ্চয় মেয়েটার চুল ওর মুখে পড়বে, ও হাত দিয়ে সেগুলো সরিয়ে দেবে,
এভাবেই তো আস্তে আস্তে প্রেমে পড়ে যাবে! মন খারাপ করে ঘরে এসে বসে রইলাম, কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
এভাবেই কেটে গেলো কয়েকদিন, একদিন রাতে দুজন এক সঙ্গে বসে খাচ্ছিলাম, হঠাৎ ওর অফিসের একটা মেয়ে বন্ধু ফোন দেয়,
ও ফোন রিসিভ করে কথা বলতে থাকে, ওর খাওয়ার কোন হুস নেই, কথা বলতেই ব্যস্ত, এক পর্যায়ে ও বলে- - ঠিক আছে কাল অফিসে তোমার হাতের রান্নাই খাবো,
তুমি চিন্তা করো না... আমার মাথায় বাঁশ পড়লো! কি বলে! কোন না কোন মেয়ের জন্য আমার বানানো খাবার অফিসে খাবে না!!
মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো, কোনরকম রাত পার হলো, সকালে ও খাবার না নিয়ে অফিসে চলে গেলো, আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম,
এমন চলতে থাকলে তো আমার স্বামী আমার আর থাকবে না!! ভেবে চিন্তে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নিলাম।
রাতে ও বাড়ি ফেরার পর জিজ্ঞেস করলাম- - কোথায় ছিলে এতক্ষণ? - অফিসে.. - এত লেট হলো কেন? - প্রতিদিন তো এই সময়তেই বাড়িতে আসি... আমি একটু কেঁশে নিলাম, আসলেই তো!
ও প্রতিদিন একই সময় বাড়িতে আসে। রাতে ওকে খাবার দিলাম, ও খেলো না, আমি জিজ্ঞেস করলাম- - খাবে না কেন? - বাহির থেকে খেয়ে এসেছি... - ওহহ আচ্ছা!
নতুন প্রেমিকা হয়ে গেছে?
- মানে কি?
- মানে কি সেটা তো তুমি জানো!
তুমি কার সঙ্গে খেয়ে এসেছো?
- অফিসের বস আজ খাইয়েছে,ওনার মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে!
আমি থেমে গেলাম, ওকে শাষণ করার সব রাস্তা কেমন জানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!! রাতে দুজন শুয়ে আছি, আমি অপেক্ষা করছিলাম ওর একটা ভুলের জন্য,
ও ভুল করা মাত্রই কঠিন থেকে কঠিনতম শাষণ করবো, এরই মাঝে ওর ফোন বেজে উঠে, ওর হাত থেকে সোবল মেরে আমি ফোনটা নিজের হাতে নিয়ে বলি- - এত রাতে কে তোমায় ফোন করেছে?
সারাদিন বাহিরে বাহিরে তাকে সময় দাও তাবুও কি তার হয় না? এত রাতে কেন ফোন করেছে? - আশ্চার্য্য!! কি বলো! কে ফোন করবে? - তো ফোনটা কি এমনি এমনি বাজচ্ছে?
- আরে স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখো, তোমার বড় ভাই ফোন করেছে... আমি স্ক্রীনে তাকিয়ে খুব লজ্জা পেলাম, ওকে বলার মতো আর কোন ভাষা খুঁজে পেলাম না।
মানুষটাকে কি তবে আমি মিথ্যে-মিথ্যি সন্দেহ করছি!! সকাল হলো, ও অফিসে যাচ্ছিলো, আমি বারান্দা থেকে নিচে তাকিয়ে রইলাম, পাশের বাসার মেয়েটা ওর কাছে এলো,
যখনি দুজন রিকশায় উঠতে যাবে ঠিক তখনি ও উপরে তাকালো, আমাকে দেখে মেয়েটাকে একা রেখে ও চলে গেলো, এভাবেই ওকে প্রায় এক মাস গাইড করার পর নিজের মনে একটু শান্তি এলো, এত দিনে বুঝলাম ও আমায় খুব ভয় পায়।
মনের শান্তিতে একদিন রাতে ওর জন্য পিঠা বানাচ্ছিলাম, পিঠা বানিয়ে রুমে আসার সময় শুনলাম ও খুব আস্তে আস্তে পিসপিস করে কার সাথে যেনো কথা বলছিলো,
আমি কয়েক সেকেন্ডে রুমে ঢুকে ওর হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে নিজের কানে ধরলাম, যতই হ্যালো হ্যালো করলাম কিন্তু কেউ কথা বলছিলো না,
ওকে খুব কড়া ভাষায় জিজ্ঞেস করলাম- - তার মানে এসব তলে তলে চলে! - আরে না! তুমি যা ভাবছো তা না! - তবে কি? - দেখো ওটা আননন নম্বর, আমি চিনি না।
মোবাইলে তাকিয়ে দেখলাম নম্বরটা সেভ করা নেই, সুন্দর পরিবেশেও ও খুব ঘামাচ্ছিলো, আমি কড়া কড়া কথা বলে শেষবারের মতো বললাম- - আর যদি কোন দিন দেখি কোন আননন নম্বর তুমি রিসিভ করেছো তবে বাপের বাড়ি তো যাবোই সাথে তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবো মনে রেখো!!
ও কিছু বললো না, ওর জন্য বানানো পিঠা গুলো ফ্রিজে রেখে দিলাম, খুব ইচ্ছে হয়েছিলো ওকে খাইয়ে দিতে তবে আমি খুব রাগ করেছি এটা বুঝানোর জন্য ওকে আর খেতে দেইনি,
মনে মনে আমি খুব খুশি, ইচ্ছে করে এত রাগ দেখিয়ে ওকে আমার কাছে রাখতে পারছি, আমি ওকে খুব ভালোবাসি, ওর ভাগ কাউকে দিতে চাইনা বলে আমার এই রাগ হওয়ার নাটক করতেই হয়।
এভাবেই কেটে গেলো কয়েকদিন, ও অফিসে চলে গেলো, আমি রান্নাবান্না শেষ করে একটু মার্কেটে গিয়েছিলাম, মার্কেট থেকে ফেরার পথে এক দল যুবক আমার সামনে এসে দাড়ায়,
তারপর আমার আর কিছু মনে নেই, জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি পুরানো একটা গ্যারেজ চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা, আমার মুখে কাপড় বাঁধা, আমি কথা বলতে পারছি না,
আমার পাশে চার-পাঁচটা ছেলে আলোচনা করছে - - মামা এই মালটারে ওর জামাই খুব ভালোবাসে, তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাত করা যাবে।
- কিডন্যাপ তো করছি কিন্তু দেখিস মেয়েটা যেনো পালাতে না পরে... - চিন্তা করিস না মামা, মালটার জামাই নম্বর নিয়ে কল দে, ভালো চাকরী করে, বলা মাত্রই টাকা দিয়ে দেবে... আমার মুখ বাঁধা আমি কিছু বলতে পারছি না,
ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপছিলো, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো আমাকে বাঁচাতে ও সব কিছু করতে পারে। কিডন্যাপারের একজন ওর নম্বরে কল করলো,
আমি দেখলাম যে কল করছে সে বার বার ওর নম্বরে কল দিচ্ছিলো, কিছুক্ষণ পর লোকটা বিরক্ত হয়ে বললো- - মামা হালায় তো ফোন ধরে না,
বার বার কেটে দেয়... - কি কস? ফোন কাটে ক্যা? আবার কল দে... কিছুক্ষণ আবার কল দেওয়ার পর লোকটা খুব বেশি বিরক্ত নিয়ে বলে- - মামা হালায় তো নম্বর বিজি করে রাখছে,
মনে হয় নম্বর ব্লক করছে... আমার দেহ থেকে প্রাণটা উড়ে গেলো! এবার মনে হয় আর বাঁচতে পারবো না। ওকে তো আমি নিজেই খুব বেশি শাষণ করে বলেছিলাম অপরিচিত নম্বর কখনোই রিসিভ না করতে,
এদিকে লোক গুলো আলোচনা করছে- - মামা যেমনটা ভাবছিলাম তেমনটা তো হইলো না, চল মাইয়াডারে মেরে কোথাও ফেলে রেখে আসি... আরেকজন বললো- - ঠিকি বলছিস,
ম্যাডাম তো আমাদের সবাইকে দেখেছে, ছেড়ে দিলে পরে পুলিশের কাছে যাইবো... আরেকজন বলে উঠলো- - তাকে মেরে না ফেললে আমরা বাঁচতে পারবো না,
সারা জীবন জেলের ভাত খাইতে হইবো.. বাকি সবাই এতেই মত দিয়েছে যে আমাকে মেরে ফেলা হবে। আমি বারবার মাথা নাড়াচ্ছিলাম, মনে মনে ভাবলাম, কোন দুঃখে জামাইকে এত শাষণ করতে গেলাম!
পিঁপড়া ঠেকাতে গিয়ে এখন নিজেই কুমিরের মুখে পড়ে গেলাম! মনে মনে জামাইকে একটু বকাও দিলাম, বলদের ঘরের বলদ! না হয় আমি বলেছি অপরিচিত কোন নম্বর না ধরতে তাই বলে সত্যি সত্যি তুই এটাই করবি! তবে মনে হয় না এই লোক গুলো আমায় জ্যন্ত ছেড়ে দেবে.... হা হা হা হা হা হা এ কেমন বিচার অাপনারা বলেন তো জামাই রে শাসন করে কি ভুল করলাম
0 Comments