ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের গল্প
>> বন্ধুত্ব এমনই এক মায়ার বন্ধন, যা ছাড়তে পারে না কেউই। বন্ধুত্বটা এক সময় হয়ে ওঠে একটা পরিবার হয়ে উঠে। তেমনই এক বন্ধুত্বের গল্প জানাচ্ছেন আয়াক্সের পাঁচ বন্ধু।
ছয়জনের বন্ধুত্বের গল্পের জন্য পেছন ফিরে তাকাতে হবে প্রায় এক বছর আগে। ৮ জুলাই ২০১৭, আয়াক্স আর ব্রেমেনের মধ্যকার প্রীতি ম্যাচ চলছে। হঠাৎ ম্যাচের ৭২ মিনিটের মাথায় মাঠে শুয়ে পড়লেন আবদেলহেক নুরি। আশপাশের সবাই ছুটে গেলেন, কিন্তু মাটি থেকে কোনোভাবেই ওঠানো গেল না নুরিকে।
মাঠের মাঝেই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু জ্ঞান ফিরল না। মাঠেই কার্ডিয়াক অ্যাটাক হওয়ায় সরাসরি কোমায় চলে গিয়েছেন নুরি। ২০ বছর বয়সী নুরির এমন ঘটনার পর সে ম্যাচ আর মাঠে গড়ায়নি।
আমস্টারডামে নুরির প্রতিমূর্তি। ছবি: টুইটারসবকিছু ঠিক থাকার পরেও জ্ঞান ফিরছিল না, কোমাতে একেবারে ঘুমিয়ে ছিলেন নুরি। ক্লাবও তাদের ঘরের ছেলেকে ভোলেনি। সকল খরচা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। এক বছরের ওপরে চলে গিয়েছে। অবস্থার কোনো উন্নতি নেই।
সেদিন তাঁর সঙ্গেই মাঠে ছিলেন চার বন্ধু জাস্টিন ক্লাইভার্ট, আমিন ইউনেস, কেভিন ডিক্স ও ফিলিপ স্যান্ডলার। সবাই এখন ক্যারিয়ারের পথ ধরে ক্লাব ছেড়েছেন। ক্লাইভার্ট রোমাতে, আমিন ইউনেস নাপোলিতে। ডিক্স ফিওরেন্তিনায় আর স্যান্ডলার ম্যানচেস্টার সিটিতে। তাই বলে বন্ধুকে ভুলে যাবেন?
না, তাঁরা ভোলেননি। নিজেদের ক্লাব যখন জার্সি নম্বর বেছে নিতে দিলেন, প্রত্যেকেই একটা জার্সিই বেছে নিলেন, ‘৩৪’! এই ৩৪ ছিল নুরির জার্সি নম্বর। বন্ধুর জন্য বেশি কিছু করতে না পারলেও এটুকু তো পারেন।
ক্লাব গুলোও এ দাবি মেনে নিয়েছে। বন্ধুত্বের জন্য এটুকু তো করাই যায়। বন্ধুত্ব যেন আবারও ফিরিয়ে এনেছে নুরিকে। এত দিন শুধু অক্সিজেন মাস্কই ছিল নুরির সঙ্গী। কিন্তু এক বছর এক মাস পর নিজের মুখ আর চোখের ভ্রু দিয়ে কাজ করতে পারছেন নুরি।
বাড়ির পাশে হাজারো আয়াক্স সমর্থকের প্রেরণা। ছবি: টুইটারপরিবারের মতে কোমা থেকে ফিরেছেন নুরি, ‘আগের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে নুরি অনেকটা ভালো আছে। নুরি এখন আমাদের চিনতে পারছে।’ ক্লাবের ডিরেক্টর এডউইন ভন ডার সারও বলেছেন, ‘নুরি আরও ভালো অবস্থায় ফিরতে পারবে। যদিও নিশ্চিত না, এটা একটা সম্ভাবনা।’
শুধু কি বন্ধুত্বের গল্প? বন্ধুত্বের বাইরেও আরেকটা গল্প আছে, গল্পটা সমর্থকদের। যাদের সামনে বেড়ে উঠেছেন নুরি। একদম ছোট্ট থেকে। বয়স যখন সাত, সে সময় থেকে আয়াক্সের একাডেমিতে বড় হয়ে উঠেছেন তিনি। আয়াক্সের প্রতিটি সমর্থকের সঙ্গে মিশে ছিলেন নুরি, হঠাৎ একদিন উধাও।
৩ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে ক্লাবে ঢোকা ছেলেটা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি ছুঁয়েই হারিয়ে যাবে, এটা মানা যায় না। তাঁর যে আকাশ ছোঁয়ার কথা, তাঁকে নিয়েই আশা দেখেছিল আমস্টারডামের সকলে। বিশ্বের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হওয়ার কথা যাঁর, তাঁর চলে যাওয়া কি মানায়?
আয়াক্সের হয়ে এখন মাঠ মাতানোর কথা ছিল নুরির। ফাইল ছবিপ্রতিটি সমর্থকের হাত উঠেছিল বিধাতার দরবারে। অন্তত মাঠে না হোক, তাঁকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। রাস্তায় ফুটবল নিয়ে দৌড়ে বেড়ানো বাচ্চাদের আদর্শ নুরির জন্য প্রার্থনা উঠেছিল সারা বিশ্বের সকল ফুটবল ভক্তদের কাছ থেকে। তাঁর বাসায় সামনে জড়ো হয়ে এক সঙ্গে প্রার্থনা করেছেন সবাই।
নুরি একদিন জেগে উঠবেন। ইতালি-ইংল্যান্ড-ফ্রান্স থেকে ক্লাইভার্ট, আমিন, ডিক্স, স্যান্ডলার ছুটে আসবেন। কোনো দিন হয়তো মাঠে ফিরবেন, এক সঙ্গে হয়তো খেলার সুযোগও হবে। সতীর্থ হয়ে, প্রতিপক্ষ হয়ে—ম্যাচের শেষে জাপটে ধরবেন একে অপরকে। এ আশা এখন সবার।
0 Comments