★★→আমি অভ্র । খুব অগোছালো এবং ভবঘুরে। নির্জন কোন পথে একাকী হাঁটতে খুব ভালো লাগে। 


  তাই মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায় কোন নির্জন রাস্তায় ( একদম বাস্তবের মতো ) । 


  এমনি একদিন গোধূলি বিকেলে হাঁটছিলাম। হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় রাস্তার মাঝখানে। 


  চোখ আটকে গেছে সামনে থেকে আসা এক মেয়ের উপর। 


  হলুদ রঙের কামিজ আর নীল রঙের সালোয়ার ও ওড়না পড়েছিল মেয়েটা। 


  চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। যেন স্বপ্নের দেশে হারিয়ে গেছি। 


  হঠাৎ করে শাকিলের (আমার ফ্রেন্ড)ডাকে চমকে উঠলাম। 


   – কিরে রাস্তার মাঝখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?? 

  – না কিছু না। চল বাসায় যাই। 

  – আচ্ছা চল।। 


   রাতে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু ঘুম যেন কোথায় হারিয়ে গেল। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে আসছিল সেই মায়াবী চেহারাটা। 


  পরেরদিন বিকেল। একটু আগেই চলে গেলাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম সেই মায়াবী চেহারাটা একবার দেখার জন্য। 


  কিন্তু মেয়েটার কোন খোঁজ নেই। রাগ করে চলে আসবো এমন সময় দেখি কেউ একজন আসছে। 


  হ্যাঁ এটাই তো সেই মেয়ে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি তার দিকে । 


  কি অপূর্ব দেখতে। মেয়েটাও একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে চলে গেল। 


  এভাবে প্রতিদিন অপেক্ষা করতে লাগলাম এক পলক দেখার আশায়। 


  আজ আবার যাচ্ছি কিন্তু না শুধু দেখা করার জন্য না। আজ কথা বলবো জানবো তার সবকিছু। 


  যথাসময়ে চলে গেলাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম তার জন্য। আজ একটু নার্ভাস ফিল করছি মনে হচ্ছে। 


  কি বলবে না বলবে এসব ভেবে ঘেমেও যাচ্ছি। কিন্তু কোথায় মেয়েটা। সন্ধ্যা হয়ে গেল। 


  না আজ আর আসবে না। চলে আসলাম। পরেরদিন আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম কিন্তু না সেদিনও এলো না। 


  এভাবে সপ্তাহ পার হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলাম হঠাৎ করে এসেছিল হঠাৎ করেই গেল। 


  আগের মতো আজ আবার হাঁটতে ইচ্ছে করছে। তাই চলে গেলাম সেই নির্জন পথে। 


  হেডফোন কানে দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ করে আবার সেই আগের মতো। 


  নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। হ্যাঁ এটা সেই মেয়ে। হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। 

  দেখতে দেখতে আমাকে পার করে চলে গেল মেয়েটা।


   – এই যে ম্যাডাম।। 

  – আমাকে বলছেন?? (পেছনে ঘুরে) 

  – আশেপাশে তো আর কাউকে দেখছি না।। 

  – জ্বী বলুন? 

  – নাম কি আপনার?? 

  – তিতলী। 

  – সুন্দর নাম। আমি অভ্র নীল। আর হ্যাঁ এই ১ সপ্তাহ কই ছিলেন?? 


  – নানুর বাসায়। আর আমি ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলাম না আপনি কি করে জানলেন,? তার মানে আপনি আমায় ফলো করেন?


  – হুমম করি তো? আপনার ফোনটা দেখি? (কিছু বলার আগেই ফোনটা হাত থেকে নিয়ে আমার নাম্বার তুলে একটা কল দিলাম) এইটা আমার নাম্বার। 


 এখন বাই আমার কাজ আছে। বলেই ফোনটা তিতলীর হাতে দিয়ে চলে আসলাম। 


 পেছনে ঘুরে দেখি তিতলী আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। 


  রাতে খেয়ে ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলাম। তিতলীর নাম্বারটা বের করে ভাবছিলাম ফোন দিব।


  আবার ভাবছিলাম তখন হুট করে চলে আসছি কিছু না বলে। এখন কি না কি বলবে। এসব ভাবতে ভাবতে কল দিয়েই দিলাম। 


  – হ্যালো।। (ওপাশ থেকে) 

  – কেমন আছেন?? 

  – ভালো । আপনি?? 

  – ভালো না। 

  – কেন?

  – আপনি এতো সুন্দর কেন? 

  – ঢপ দিয়েন নাতো। তখন ওই ভাবে হুট করে চলে গেলেন কেন? 

  – তাকিয়ে থাকতে পারছিলাম না তাই। 

  – কি? 

  – না কিছু না। কি করছেন? 

  – বসে আছি। আপনি?? 

  – মনের মানুষটার সাথে কথা বলছি। 


  – মানে? 

  – না কিছু না। 

  – সব কিছু তে কিছু না কিছু না করেন কেন? বলতে কি ভয় পাচ্ছেন? h – ভয় পাবো কেন? 


  – তাহলে? 

  – আসলে আমি এতো জলদি পেতে চাচ্ছি না। আমি শুনেছি যেটা যত জলদি আসে সেটা তত জলদি চলে যায়। h – মানে? 


  – কিছু না। আজ গুড নাইট।

   কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে দিলাম। এরপর থেকে রেগুলার কথা হতো। ভালোই কাটছিল সময়। দিনের বেশিরভাগ সময় তিতলীর সাথে কথা বলে কাটাতাম। 


 আমি বুঝতাম ও আমাকে ভালোবেসে ফেলছে। শুধু আমার বলার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু আমি এতো জলদি বলতে চাই না। 


 আজ একমাস পূরন হলো তিতলীর সাথে কথা বলার। ভাবতেছি আর অপেক্ষা করানো ঠিক হবে না।


 এবার অন্তত বলা উচিত। ফোন দিলাম তিতলী কে… 

  – হ্যালো।। 

  – কালকে দেখা করবা? 

  – কোথায়? 

  – আমাদের যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিল।

  – ওকে।

   বিকেলে চলে গেলাম সেখানে। যাওয়ার পথে একটি গোলাপ কিনে নিলাম। গিয়ে দেখি তিতলী দাঁড়িয়ে আছে। আমি কোন কথা না বলে ওর সামনে হাটু গেরে বসে গোলাপটা দিয়ে বললাম…


    – আমি তোমাকে ভালবাসি… 

   তিতলী আমার হাত থেকে ফুলটা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো…


    – আমিও তোমাকে ভালোবাসি… 

   শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি তিতলী কে। হঠাৎ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো আমায়। 


  – এই কথাটা বলতে এত্তো সময় লাগে? 

  – আরে পাগলী দেখছিলাম তুমি আমায় কতোটা ভালোবাসো? 

  – অতো কিছু বুঝি না। তুমি আমাকে কষ্ট দিছো শাস্তি পেতেই হবে।

  – কি শাস্তি আবার? 

  – কান ধরো। 


  – মানে কি দেখছো কত্তো মানুষ। 

  – তো আমি করবো?

  – কি আর করার কান ধরতেই হলো।


   আমি কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ও আমার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। কিচ্ছু বলছে না। আমি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম এভাবে জড়িয়ে ধরলে আমি হাজার বার কান ধরতে রাজী!!