যা হয় ভালর জন্যই হয়



  এক রাজার এক উজির ছিল। উজিরটা সব সময় যেকোনো অবস্থাতেই রাজাকে বলতো,"রাজা মশাই, কখনো মন খারাপ করবেন না। কেননা আল্লাহ যা করেন তা মঙ্গলের জন্যই করেন। "একদিন রাজা ও তার উজির বনে শিকারে যেয়ে নিজেরাই এক হিংস্র প্রাণীর আক্রমণের শিকার হলো। রাজার উজির সেই হিংস্র প্রাণীটাকে মারতে পারলেও, ততক্ষণে রাজা তার একটা আঙুল খুইয়ে বসেছেন সেই হিংস্র প্রাণীটির কামড়ে। রাজা তখন রাগে-যন্ত্রণায়- ক্ষোভে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে ওঠেন,"হে অধম উজির, আল্লাহ যা করেন তা যদি মঙ্গলের জন্যই করে থাকেন, তবে আজকে শিকারে এসে আমারএকটা আঙুল হারাতে হলো কেন?"উজির ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো,"রাজা মশাই আমি জানি না এমন কেন হলো? কিন্তু এত কিছুর পরও আমি শুধু আপনাকে একটা কথাই বলব, আল্লাহ যা করে তা মঙ্গলের জন্যই করে উজিরের এই কথায় রাজা আরও রেগে তিক্ত হয়ে তিনি উজিরকে জেলে পাঠানোর হুকুম দিলেন। কিছুদিন পর রাজা উজিরকে বন্দী দশায় রেখে, একা আবার শিকারে বের হলেন। এবার বনে শিকার করতে গিয়ে রাজা একদল বন্য জংলী মানুষের হাতে বন্দি হলেন। এরা তাদের দেবদেবীর উদ্দেশ্যে তাদের বনে প্রবেশ করা নতুন নতুন মানুষকে ধরে এনে বলি দিত। জংলী মানুষরা যখন রাজাকে বলি দিতে গেলো, তখন তারা দেখল যে, রাজার একটা আঙুল নেই। তাই তারা এমন বিকলাঙ্গ কাউকে তাদের দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে রাজি হলো না। কারণ তারা বিশ্বাস করতো তাদের দেবতার উদ্দেশ্যে কোন বিকলাঙ্গ মানুষ বলি দিলে তা দেবতাকে অপমান করা হয় ।তাই তারা রাজাকে ছেড়ে দিল। খুশি মনে রাজা প্রাসাদে ফিরে সেই পুরনো উজিরকে মুক্ত করে দেওয়ার হুকুম দিলো এবং উজিরকে ডেকে এনে বললেন আল্লাহ যা করেন আসলেই তো মঙ্গলের জন্যই করেন। আমি আজ প্রায় মরতেই বসেছিলাম। কিন্তু আমারএকটা আঙুল না থাকার কারণে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছি।"তবে তোমার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে। আল্লাহ যা করে তা মঙ্গলের জন্যই করে,এটা তো বুঝলাম। কিন্তু তাহলে তিনি আমাকে দিয়ে তোমাকে বন্দি করালেন কেন?"উজির তখন হেসে বলল,"রাজামশাই, আমি যদি আজ জেলে না থাকতাম,তবে আপনার সাথে আমিও থাকতাম এবং দুজনেই বন্দী হতাম এবং আপনার বদলে আজ আমি কোরবান হয়ে যেতাম। কারণ আপনার একটা অঙ্গ বিকলাঙ্গ ছিল, কিন্তু আমার তো কোন অঙ্গবিকলাঙ্গ ছিল না । কাজেই আল্লাহ যা করেন সেটা মঙ্গলের জন্যই করেন,। "তাই আল্লাহর উপর যারা আস্থা এবং বিশ্বাস রাখে, আল্লাহ তাদেরকে খুব পছন্দ করেন এবং তাদের পাশে সব সময় থাকেন।